ফাউমি মুরগি কত দিনে ডিম দেয় এবং ফাউমি মুরগি পালন পদ্ধতি
ফাউমি মুরগি কত দিনে ডিম দেয় এ বিষয় সম্পর্কে আপনি যদি বিস্তারিত জানতে
চান তাহলে আমাদের এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন। কেননা আমরা আমাদের এই
আর্টিকেলে ফাউমি মুরগি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করতে চলেছি।
তাছাড়াও আপনি এই আর্টিকেল থেকে আরো জানতে চলেছেন ফাউমি মুরগি পালন
পদ্ধতি সম্পর্কে। ফাউমি মুরগি একটি লাভজনক মুরগি খামারী ব্যবসায়ীদের জন্য। তাই
অনেক খামারিরা রয়েছে যারা এই মুরগি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চায় মূলত তাদের
জন্যই এই আর্টিকেল।
পোস্ট সূচিপত্র ঃ ফাউমি মুরগি কত দিনে ডিম দেয়
- ফাউমি মুরগি কত দিনে ডিম দেয়
- ফাউমি মুরগি পালন পদ্ধতি
- ফাউমি মুরগির বাচ্চা চেনার উপায়
- ফাউমি মুরগির দাম কত
- ফাউমি মুরগির খাবার তালিকা
- আমাদের শেষ কথা ঃ ফাউমি মুরগি কত দিনে ডিম দেয়
ফাউমি মুরগি কত দিনে ডিম দেয়
ফাউমি মুরগি কত দিনে ডিম দেয় আপনার এই বিষয়টি জানা অত্যন্ত জরুরী
যদি আপনি একজন খামারি হন বা হতে চান। সাধারণত ফাউমি মুরগি একটি উন্নত জাতের
মুরগি যা একজন খামারির জন্য অত্যন্ত লাভজনক। কেননা ফাউমি স্বাদে অনেক
সুস্বাদু যার ফলে মানুষ এই মুরগি খেতে অনেক বেশি পছন্দ করে থাকে। আবার এই
মুরগি বছরে অনেক বেশি ডিম দিয়ে থাকে যার জন্য অনেক বেশি লাভ হয়
খামারির।
আরো পড়ুন ঃ টাইগার মুরগি চেনার উপায়
একজন খামারি হিসেবে আপনি যদি ফাউমি মুরগি পালন করতে চান তাহলে আপনাকে এই
মুরগি সম্পর্কে জানা অত্যন্ত জরুরী। বিশেষ এই মুরগি কত দিনে ডিম দেয় এবং কতটি
বছরে দেয়। আবার কত দিন পর পর দেয় এই বিষয় গুলো সম্পর্কে। ফাউমি মুরগি সাধারণত
৫ থেকে ৬ মাসের মধ্যেই ডিম দেওয়া শুরু করে দেয়। তবে কিছু কিছু ফাউমি মুরগির
ডিম দিতে কিছুটা সময় লাগে। তবে ফাউমি মুরগির ডিম দেওয়া নির্ভর করে খাদ্য এবং
পরিবেশের উপর। ফাউমি মুরগি বছরে ১৬০ থেকে ২০০ টি ডিম দিয়ে থাকে। তবে যত্ন
নিলে এই জাতের মুরগি আরো বেশি ডিম দিতে পারে।
ফাউমি মুরগি পালন পদ্ধতি
ফাউমি মুরগি পালন পদ্ধতি সম্পর্কে আপনাকে অবশ্যই জানতে হবে যদি আপনি একজন
ভালো খামারি হতে চান। বিশেষ করে আপনি যদি ফাউমি মুরগি পালন করতে চান আপনার
খামারে। যেহেতু ফাউমি মুরগি বিদেশি জাতের মুরগি তাই এই মুরগির
সম্পর্কে আমাদের দেশের মানুষ জন খুবই কম জানে। সে কারণেই আমরা আপনাদের জন্য
এই আর্টিকেলটি সুন্দরভাবে সাজিয়েছি।
বাসস্থান প্রস্তুতি
- বসবাসের জায়গা : ফাউমি মুরগির জন্য একটি শান্ত ও নিরাপদ জায়গা তৈরি করতে হবে। এই মুরগির জন্য বড়, শীতল এবং বায়ুচলাচল পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।
- মেঝে : মেঝে পরিষ্কার ও শুকনো ভাবে তৈরি করতে হবে। মাটির ওপর পলিথিন, কাঠের খন্ড বা বালি রেখে মুরগি গুলোর জন্য আরামদায়ক পরিবেশ তৈরী করতে হবে।
- আলোর ব্যবস্থা : মুরগির জন্য পর্যাপ্ত আলো, বাতাস এবং তাপ নিশ্চিত করতে হবে। খুব বেশি গরম বা ঠান্ডা পরিবেশ তাদের স্বাস্থ্য ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
- নিরাপত্তা : বাসস্থানে শিকারী প্রাণী বা অন্য প্রাণী প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করতে হবে।
স্বাস্থ্য ও যত্ন
- ভ্যাকসিনেশন : ফাউমি মুরগির জন্য সঠিক সময়ে ভ্যাকসিনেশন করানো জরুরি যাতে করে রোগবালাই থেকে রক্ষা পায়। সাধারণভাবে নিকটস্থ পশু চিকিৎসকের সাহায্যে এ সংক্রান্ত পরামর্শ নেওয়া উচিত।
- প্যারাসাইট নিয়ন্ত্রণ : মুরগির শরীরে পরজীবী যেমন টিক এবং চর্মরোগ প্রতিরোধের জন্য নিয়মিত ব্যবস্থা নিতে হবে। স্নান এবং জীবাণুনাশক স্প্রে ব্যবহৃত হতে পারে।
- নিরাপদ পরিচর্যা : মুরগির বাসস্থান ও খাবারের পাত্র পরিষ্কার রাখতে হবে। মাটির নিচে মল জমতে না দেওয়া যাবে না যাতে করে সংক্রামক রোগ না ছড়ায়।
প্রজনন ও ডিম সংগ্রহ
- প্রজনন : ফাউমি মুরগি সাধারণত ৫-৬ মাস বয়সে প্রজননক্ষম হয়। মোরগ এবং মুরগির সঠিক মিলনের মাধ্যমে ডিম উৎপাদন হয়।
- ডিম সংগ্রহ : প্রতিদিন ডিম সংগ্রহ করুন যাতে করে ডিম পচে না যায়। ডিম সংগ্রহের পর এটি পরিষ্কার ও ভালোভাবে সংরক্ষণ করতে হবে।
- ফোটানোর ব্যবস্থা : যদি নতুন বাচ্চা উৎপাদন করতে চান তবে ডিমের জন্য আলাদা হ্যাচারি বা ইনকিউবেটরের ব্যবস্থা করতে হবে।
খাদ্য সম্পূরক ও বাচ্চার পরিচর্যা
- প্রোটিন সম্পূরক : বিশেষ করে বাচ্চাদের জন্য প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার যেমন গম বা ভুট্টা জাতীয় দেওয়া উচিত।
- বাচ্চাদের যত্ন : নতুন বাচ্চাদের জন্য আলাদা বাসস্থান তৈরি করুন যেখানে তারা শান্তিপূর্ণভাবে বড় হতে পারে। বাচ্চাদের স্বাস্থ্য এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য আলাদা তাপমাত্রা এবং সুরক্ষা ব্যবস্থা করা দরকার।
রোগ প্রতিরোধ
- প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা : মুরগি পালনে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার মধ্যে সঠিক খাদ্য, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
- বিশেষ যত্ন : রোগবালাই ও পরজীবী থেকে রক্ষা করতে নিয়মিত গোসল করানো, স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং কোনো অস্বাভাবিক লক্ষণ দেখলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া দরকার।
ফাউমি মুরগির বাচ্চা চেনার উপায়
ফাউমি মুরগির বাচ্চা চেনার উপায় সম্পর্কে জানা আপনার জন্য অত্যন্ত জরুরী যদি আপনি একজন ভালো খামারি হতে চান। বিশেষ করে আপনি যদি ফাউমি মুরগি পালন করতে চান আপনার খামারে। ফাউমি মুরগি পালন করতে হলে আপনাকে প্রথমে এই বাচ্চার সম্পর্কে জানতে হবে। কেননা আপনি যদি আপনি এই মুরগির বাচ্চা সম্পর্কে না জানেন তাহলে এই মুরগি পালন করতে একটু সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে।
- ফাউমি মুরগির বাচ্চার শরীর বড় হয় এবং তাদের পিঠের অংশটা পুরু হতে পারে। তবে মহিলা বাচ্চা কিছুট কোমল এবং ছোট হয়ে থাকে।
- ফাউমি মুরগির বাচ্চার গায়ের রং হালকা থেকে গাড় রঙের হয়ে থাকে। বাচ্চার গায়ের রং সাদা, কালো এবং ফুল কালারের হতে দেখা যায়।
- ফাউমি মুরগির বাচ্চার মাথার সাইজ কিছুটা বড় এবং গাড় রঙের হয়ে থাকে। তবে মহিলা বাচ্চার কিছুটা ছোট হতে পারে।
- ফাউমি মুরগির বাচ্চা প্রথম থেকেই খুব ভালো ভাবে চলতে পারে।
- এদের গলা অন্যান্য বাচ্চার চেয়ে কিছুটা মোটা হয়ে থাকে।
- এদের পা কিছুটা মোটা হতে দেখা যায় আবার মহিলা বাচ্চার কিছুটা চিকন হতে দেখা।
ফাউমি মুরগির দাম কত
ফাউমি মুরগির দাম সম্পর্কে বলা একটু ঝামেলার বিষয়। কেননা এই মুরগির দাম বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে। বয়সের উপর নির্ভর করে এই বাচ্চার দাম কিছুটা পরিবর্তন হতে দেখা যায়। এই মুরগির দাম কিছুটা বেশি হয়ে থাকে। কেননা এই মুরগি পুরোটাই বিদেশি জাতের হয়ে থাকে। এই মুরগির ১ থেকে ৫ দিনের বাচ্চার দাম ১০০ টা পর্যন্ত হতে থাকে। আবার ১৫ থেকে ৩০ দিনের বাচ্চার দাম ২০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। প্রাপ্ত বয়স্ক মুরগির দাম ৫০০ থেকে ১০০০ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।
ফাউমি মুরগির খাবার তালিকা
পোলট্রি ফিড
- ব্রয়লার ফিড : যদি ফাউমি মুরগি মাংস উৎপাদনের জন্য হয়, তবে ব্রয়লার ফিড ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে উচ্চ প্রোটিন, ফ্যাট এবং শক্তির উপাদান থাকে।
- লেয়ার ফিড : যদি ফাউমি মুরগি ডিম দেয়, তবে লেয়ার ফিড ব্যবহার করা উচিত, যাতে ক্যালসিয়াম এবং অন্যান্য উপাদান থাকে, যা ডিম উৎপাদন এবং শক্ত হাড়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
শস্য খাদ্য
- ভুট্টা : ফাউমি মুরগির শক্তি বৃদ্ধির জন্য ভুট্টা একটি গুরুত্বপূর্ণ শস্য। এটি প্রধানত শর্করা এবং কিছু প্রোটিন প্রদান করে।
- গম : গমও শক্তির একটি ভালো উৎস।
- চাল : চালও মুরগির শক্তির জন্য ব্যবহৃত হতে পারে, তবে এটি অন্যান্য উপাদানের তুলনায় কম পুষ্টিকর।
প্রোটিন উৎস
- মাছের আটা : মাছের আটা প্রোটিন এবং ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের ভালো উৎস, যা মুরগির শারীরিক বৃদ্ধি ও পুষ্টির জন্য সহায়ক।
- সয়া আটা : সয়া আটা প্রোটিনের ভালো উৎস এবং উদ্ভিজ্জ উৎস হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।
- ডিম : ডিমও প্রোটিনের ভালো উৎস।
সবুজ শাকসবজি
- পালং শাক : পালং শাক মুরগির পুষ্টির জন্য খুবই উপকারী, এতে ভিটামিন এবং খনিজ থাকে।
- মুলা শাক ও লাল শাক : এগুলি মুরগির স্বাস্থ্য বৃদ্ধিতে সহায়ক এবং তারা স্বাভাবিক পুষ্টি পায়।
- গাজরের পাতা : গাজরের পাতা মুরগির জন্য পুষ্টিকর এবং ভিটামিন প্রদান করে।
তেল ও ফ্যাট
- ভুট্টা তেল বা সয়া তেল : তেল মুরগির শক্তির উৎস হিসেবে কাজ করে। এটি তাদের দেহের শক্তির চাহিদা পূরণ করে।
- গোল মরিচ বা মশলা : এটি কিছু পরিমাণে খাবারে দেওয়া যেতে পারে, তবে অতিরিক্ত পরিমাণে নয়।
পানি
ফাউমি মুরগির জন্য তাজা এবং পরিষ্কার পানি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত পানি
পান তাদের শারীরিক কার্যক্রম বজায় রাখতে সাহায্য করে।
আমাদের শেষ কথা ঃ ফাউমি মুরগি কত দিনে ডিম দেয়
সম্মানিত পাঠকগণ আমরা আমাদের এই আর্টিকেলে আলোচনা করেছি ফাউমি মুরগি কত দিনে
ডিম দেয় এবং ফাউমি মুরগি পালন পদ্ধতি সম্পর্কে। তাছাড়াও আরো
অন্যান্য সকল বিষয় নিয়ে এই আর্টিকেলে আলোচনা করেছি। ফাউমি মুরগি একটি অত্যন্ত
লাভজনক মুরগি খামারির জন্য। কেননা এই মুরগি স্বাদে যেরকম সুস্বাদু সেরকম সারা বছর
ডিম দিয়ে থাকে। যার ফলে খামারের অত্যন্ত লাভ হয়ে থাকে এই মুরগি পালন করার
মাধ্যমে।
এখন আপনি যদি ফাওমি মুরগি পালন করতে চান আপনার খামারে। তাহলে আপনাকে অবশ্যই এই
মুরগি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হবে। কেননা এই মুরগি বিদেশি জাতের মুরগি সে কারণে
আমাদের এই মুরগির সম্পর্কে ধারণা একটু কম। আর সেই জন্যেই আমাদের এই
আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য সুন্দরভাবে সাজানো রয়েছে। যাতে করে আপনিও এই আর্টিকেলটি
পড়ার পর একজন ভালো খামারি হয়ে উঠতে পারে। আমরা আশাবাদী যাই আপনারা এই আর্টিকেল
থেকে অনেক বেশি উপকৃত হবেন।
ট্রাজেডি আইটি নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url