গর্ভাবস্থায় পালং শাক খাওয়ার উপকারিতা এবং খাওয়ার নিয়ম
গর্ভাবস্থায় পালং শাক খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আজকে আমরা আলোচনা করতে চলেছি।
গর্ভাবস্থা এমন একটি সংবেদনশীল সময় যে সময় কোন কিছু করা বা খাওয়ার আগে
সম্পূর্ণভাবে তার সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে করা উচিত।
তাই আমাদের এই পোস্ট থেকে গর্ভাবস্থায় পালং শাক সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে
নেন। তাছাড়াও আপনারা এই পোস্টে আরো জানতে পারবেন পালং শাকের জুসের
উপকারিতা সম্পর্কে। তাহলে আসুন এ সকল বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা লাভ
করূন।
পোস্ট সূচিপত্র ঃ গর্ভাবস্থায় পালং শাক খাওয়ার উপকারিতা
গর্ভাবস্থায় পালং শাক খাওয়ার উপকারিতা
গর্ভাবস্থায় পালং শাক খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আপনাদের জানা উচিত যদি আপনারা
একজন পিতা মাতার হতে চলেছেন। গর্ভাবস্থায় পালং শাকের উপকারিতা জানার আগে আমাদের
জানতে হবে যে ব্যবস্থায় পালং শাক খাওয়া যাবে কিনা। এর উত্তরে বিভিন্ন
বিশেষজ্ঞরা বলে থাকে যে গর্ভাবস্থায় পালং শাক খাওয়া অত্যন্ত উপকারী যদি সঠিক
নিয়ম এবং পরিমাণ মতো খাওয়া হওয়া হয়। তাগলে আসুন এখন জেনে নেন যে গর্ভাবস্থায়
পালং শাকের উপকারিতা সম্পর্কে।
- পুষ্টির জন্য
- জন্মগত ত্রুটি রোধে
- রক্তস্বল্পতা রোধে
- হজমের জন্য
- রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতায়
- ক্যালসিয়ামের ঘাটতি
- মানসিক চাপে
- দৃষ্টিশক্তিতে
- ত্বকের জন্য
পুষ্টির জন্য ঃ একজন মায়ের প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি প্রয়োজন।
কেননা এ সময় অনেক খারাপ সময়ের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। বিশেষত প্রসবের সময়
অনেক বেশি পুষ্টি প্রয়োজন হয়। তাই একজন মাকে গর্ভাবস্থায় নিয়ম মত পালং
খাওয়ানো উচিত। কারণ পালং শাকে ভিটামিন A,C,K এবং ফোলেটের মত পুষ্টিগুণ
উপাদান রয়েছে। যা বাচ্চা এবং বাচ্চার মায়ের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
আরো পড়ুন ঃ গর্ভাবস্থায় পানি কম খেলে কি হয়
জন্মগত ত্রুটি রোধে ঃ অনেক সময় বাচ্চা হওয়ার পর দেখা যায়
বাচ্চা শারীরিকভাবে জন্মগত ত্রুটিগ্রস্ত থাকে। সেই ত্রুটিগ্রস্ত এবং স্নায়ু
উন্নয়নে সাহায্য করে থাকে এই পালং শাক। কেননা পালং শাকে রয়েছে ফোলেটের মত
পুষ্টিগুন সম্পন্ন উপাদান।
রক্তস্বপ্লতা রোধে ঃ গর্ভাবস্থায় চেয়ে বড় সমস্যাগুলোর মধ্যে
একটি হল রক্তস্বল্পতা। তাই একজন গর্ভবতী মাকে পালং শাক খাওয়ানো উচিত। কেননা পালং
শাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন জাতীয় পুষ্টি উপাদান। পালং শাক রক্তস্বল্পতা
দূর করে এবং রক্ত উৎপাদনে সহায়তা করে। তাছাড়াও আয়রন শরীরে অক্সিজেন প্রবাহের
মাত্রাও দেখাশোনা করে।
হজমের জন্য ঃ গর্ভাবস্থায় একজন গর্ভবতী মায়ের যে সমস্যা গুলো
দেখা যায় তার তার মধ্যে বড় যে সমস্যাটি হলো হজমের সমস্যা। তাই একজন মাকে
গর্ভাবস্থায় পালং শাক খাওয়া উচিত। কেননা পালং শাকে রয়েছে ফাইবার যা হজমে অনেক
বেশি সহায়তা করে।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ঃ গর্ভাবস্থায় অনেক বেশি রক্তচাপের সমস্যা দেখা
যায়। কোন উপরে আবার কোন সময় নিচে নেমে যা একজন গর্ভবতী মায়ের জন্য অত্যন্ত
ক্ষতিকর। তাই একজন মায়ের এই অবস্থায় পালং শাক খাওয়া উচিত কারণ এই শাকে রয়েছে
পটাশিয়াম যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতায় ঃ গর্ভাবস্থায় একজন মায়ের শরীরের রোগ প্রতিরোধ
ক্ষমতা কমতে যায় এবং বিভিন্ন ছোট ছোট রোগে আক্রান্ত হয়। সেই জন্য এই সমস্যা থেকে
মুক্তি পেতে গর্ভাবস্থায় পালং শাক খাওয়া উচিত। কেননা পালং শাকে রয়েছে ভিটামিন সি
এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। যা আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
ক্যালসিয়ামের ঘাটতি ঃ পালং শাকে প্রচুর পরিমানে ক্যালসিয়াম
রয়েছে। যা আমাদের দাত এবং হাড়জোড় কে মজবুত করে থাকে। তাই গর্ভাবস্থায় একজন মাকে
পালং শাক খাওয়ানো উচিত। যাতে করে বাচ্চার হাড়জোড় অথবা গ্রুণ গঠণে সহায়তা পায়।
আরো পড়ুন ঃ গর্ভাবস্থায় কি খেলে বাচ্চা ফর্সা হয়
মানসিক চাপে ঃ গর্ভাবস্থায় একজন মা অনেক বেশি দুশ্চিন্তায় থাকে।
সেই কারণে অনেক বেশি মানসিক চাপ পড়ে। এই চাপ থেকে মুক্ত হতে একজন গর্ভবতী মাকে
পালং শাক খাওয়ানো উচিত।
দৃষ্টি শক্তিতে ঃ গর্ভাবস্থায় একজন গর্ভবতী মায়ের পালংশাক
খাওয়া অত্যন্ত জরুরি। কেননা এই পালংশাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ জাতীয়
পুষ্টি কোন উপাদান। যা আমাদের চোখের দৃষ্টিশক্তিকে বৃদ্ধি করে। তাই একটি বাচ্চার
দৃষ্টিশক্তি ঠিক রাখতে গর্ভবতী মায়ের পালংশাক খাওয়া জরুরী। তাছাড়াও ভিটামিন এ
রোগ থেকে মুক্তি দিয়ে থাকে।
ত্বকের জন্য ঃ গর্ভাবস্থায় একজন মায়ের শরীরে উষ্ক
শুষ্কতা দেখা দেয়। তাছাড়াও শরীর ফ্যাকাস হতে দেখা যায়। যা মূলত ভিটামিন
সি এর অভাবে হয়ে থাকে। তাই একজন গর্ভবতী মাকে এই সময় পালং শাক খাওয়া না
জরুরী। কেননা পালং শাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি এবং
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। যা আমাদের ত্বকের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
পালং শাকের জুসের উপকারিতা
পালং শাকের জুস খুবই পুষ্টিকর এবং স্বাস্থ্যকর। এটি বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন,
মিনারেল, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফাইবার সংযুক্ত, যা আমাদের শরীরের নানা
দিককে উপকৃত করতে সহায়তা করে থাকে। তাহলে আসুন এখন জেনে নেই যে পালং
শাকের জুসের উপকারিতা সম্পর্কে।
- পালং শাকের জুস খাওয়ার ফলে আমাদের দেহের রক্তের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে এবং রক্তস্বল্পতা বা অ্যানিমিয়া দূর করে থাকে।
- পালং শাকের জুসে রয়েছে ফাইবার যার ফলে আমাদের হজম শক্তিকে তুরান্বিত করে থাকে এই পালং শাকের জুস।
-
পালং শাকের জুসের মধ্যে রয়েছে অত্যন্ত পরিমাণে ভিটামিন সি এর
পরিমাণ যার ফলে আমাদের ত্বকের জন্য অত্যন্ত উপকারী এই পালং শাকের জুস।
-
অত্যন্ত গরম থেকে আসার পর পালং শাকের জুস খাওয়ার ফলে অত্যন্ত তৃপ্তি
পাওয়া যায় কেননা পালং শাকে রয়েছে পানির পরিমাণ।
- পালং শাকের জুসে প্রচুর পরিমাণ পটাশিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে যার ফলে এই জুস খাওয়ার ফলে আমাদের হৃৎপিণ্ডকে সচল রাখতে সহায়তা করে থাকে।
-
পাং শাকের জুসে কম ক্যালরি থাকার ফলে আমাদের দেহের ওজন কমাতে
অত্যন্ত কার্যকরী এই পালং শাকের জুস।
পালং শাকের জুসের অনেক বেশি উপকারিতা রয়েছে যা আমাদের বিভিন্ন মাধ্যমে
উপকার করে থাকে। তবে এর কিছু অপকারিতাও থাকতে পারে তা নিয়ে আমরা পরবর্তী
আলোচনা করব। তবে এখন আমরা জানবো পালং শাক খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে এবং
তার পুষ্টি গুণ উপাদান সম্পর্কে।
পালং শাকের পুষ্টিগুন উপাদান
উপাদান | পরিমাণ |
---|---|
ভিটামিন A | ৪৬৯মাইক্রো গ্রাম |
ভিটামিন B6 | |
ভিটামিন c | ২৮.১ মাইক্রো গ্রাম |
ভিটামিন k | |
ভিটামিন E | ৪৮৩ মাইক্রো গ্রাম |
ফোলেট | ১৯৪ মাইক্রো গ্রাম |
ক্যালোরি | ২৩ ক্যালোরি |
প্রোটিন | ২.৯ গ্রাম |
কার্বোহাইড্রেট | ৩.৬ গ্রাম |
চর্বি | ০.৪ গ্রাম |
আয়রন | ২.৭ মাইক্রো গ্রাম |
ক্যালসিয়াম | ৯৯ মাইক্রো গ্রাম |
ম্যাগনেসিয়াম | ৭৯ মাইক্রো গ্রাম |
পটাশিয়াম | ৫৫৮ মাইক্রো গ্রাম |
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট |
পালং শাকের উপকারিতা
পালং শাক যাকে আমরা ইংরেজিতে বলি Spinach সম্পর্কে আমরা অনেক কিছু এই
আর্টিকেলে জানব। পালং শাকের মধ্যে অত্যন্ত পুষ্টিকর উপাদান রয়েছে যা আমাদের
বিভিন্নভাবে উপকৃত করে। তাহলে আসুন আমরা এখন দেরি না করে জেনে নেই যে পালং শাক
খাওয়ার ফলে আমরা কি কি উপকারিতা পেতে পারি।
পালং শাকের বিভিন্ন উপকারিত রয়েছে যেমন হৃদরোগে ভালো কাজ করে থাকে,
ক্যান্সারের কোষ ধ্বংস করতে কাজ করে আবার সে সাথে ওজনের প্রভাব কমাতে সাহায্য
করে থাকে। পালং শাক খাওয়ার উপকারিতা নিম্নলিখিত,
- পালং শাক খাওয়ার ফলে অ্যানিমিয়া বা রক্তস্বল্পতা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। কেননা পালং শাকে প্রচুর পরিমাণে আয়রন ও ফোলেট রয়েছে যা আমাদের দেহের রক্ত উৎপাদনে সহায়তা করে।
-
পালং শাকে ভিটামিন এ এর মত পুষ্টিগুণ থাকায় পালং শাক খাওয়ার ফলে আমাদের
চোখের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি হয় এবং সেইসাথে রাতকানার মত সমস্যা থাকলে সেই
সমস্যা থেকে মুক্ত হওয়া যায়।
-
পালং শাকের মধ্যে পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং ফাইবার রয়েছে যা রক্তচাপ
নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। ফলে হৃদরোগ বা স্ট্রোকের মতো ঝুঁকি কমাতে সাহায্য
করে থাকে পালং শাক। তবে অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে আবার হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়তেও
পারে।
-
পালং শাকের মধ্যে অনেক বেশি ফাইবারের উপাদান রয়েছে যা হজম প্রক্রিয়াকে
তুরান্বিত করে থাকে। আবার কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যাতেও খুব ভালো কাজ করে থাকে
পালং শাক।
-
ত্বকের যত্নে পালং শাক অত্যন্ত উপকারী। কেননা পালং শাকে
রয়েছে এন্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন সি এর মত পুষ্টিগুন উপাদান।
-
পালং শাক সঠিক নিয়ম মত খাওয়ার ফলে আমাদের দেহের ওজন কমাতে সহায়তা করে
থাকে। কেননা পালং শাকে রয়েছে ফাইবার যা আমাদের ক্ষুধা কমিয়ে রাখতে
সাহায্য করে।
-
পালং শাকে এমন কিছু পুষ্টিকর খনিজ উপাদান রয়েছে যার ফলে আমাদের দেহের
ক্যান্সারের কোষ কে ধ্বংস করতে সহায়তা করে এই পালং শাক।
-
পালং শাকে যেহেতু অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন সি এর মত উপাদান রয়েছে
যার ফলে পালং শাক খাওয়ার ফলে আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি
পায়।
-
পালং শাকে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে যার ফলে আমাদের মানসিক
স্ট্রেস বা দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তিযুদ্ধে সাহায্য করে থাকে এই পালং শাক।
-
পালং শাকে যে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম রয়েছে তা আমরা কিন্তু জানি। তাই
পালং শাক খাওয়ার ফলে আমাদের হাড় জোড়কে মজবুত করে এবং দাঁতের মাংসপেশী সচল
রাখে।
-
পালং শাকে যেহেতু আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম এবং ভিটামিন বি এর মত উপাদান রয়েছে
যার ফলে পালং শাকের জুস খেলে আমাদের শরীরে এনার্জির স্তরকে বৃদ্ধি করে এবং
সকল রকমের ক্লান্তি দূর করতে সহায়তা করে থাকে।
আসলে পালং শাক অত্যন্ত পুষ্টিকর একটি শাক যা আমাদের বিভিন্নভাবে উপকৃত করে। এর উপকারিতা নিয়ে কথা বলার মত আর কিছু নেই কেননা এ শাক আমাদের দেহের সকল পর্যায়ের উপকারিতায় অংশগ্রহণ করে। তবে উপকারিতা রয়েছে বলে অতিরিক্ত পরিমাণে এই শাক খাওয়া আবার ঠিক নয় কিন্তু এতে উপকারের চেয়ে আবার অপকারিতায় বেশি হতে পারে।
পালং শাকের অপকারিতা
পালং শাক সাধারণত স্বাস্থ্যকর এবং পুষ্টিকর হয়ে থাকে। তবে এর কিছু অপকারিতাও
থাকতে পারে, বিশেষত যদি অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া হয় বা কিছু বিশেষ শারীরিক
অবস্থায় এর ব্যবহার করা হয়। পালং শাকের অপকারিতা বা অস্বস্তি হতে পারে। তাহলে
আসুন আমরা জেনে নেয় যে কি কি সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- অতিরিক্ত অক্সালেটের সমস্যা
- গ্যাস বা পেটের সমস্যা
- ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য
- আয়রন শষণের সমস্যা
- মাথাব্যথা বা শারীরিক অস্বস্তি
- গর্ভাবস্থায় সতর্কতা
- এলার্জির প্রতিক্রিয়া
অতিরিক্ত অক্সালেটের সমস্যা ঃপালং শাকে উচ্চ পরিমাণে অক্সালেট
থাকে। যার ফলে ক্যালসিয়াম এবং অন্যান্য খনিজের সাথে যুক্ত হয়ে ক্যালসিয়াম
অক্সালেট ক্রিস্টাল তৈরি করতে পারে। ফলে এটি কিডনির পাথর বা পিত্তথলির পাথর
তৈরি হতে সহায়তা করতে পারে। বিশেষ করে যদি কেউ ইতিমধ্যে কিডনি সমস্যা বা
পিত্তথলির সমস্যায় ভোগেন।
গ্যাস বা পেটের সমস্যা ঃ পালং শাকের কারণে অনেকের জন্য গ্যাস বা
পেট ফেঁপে যাওয়ার মত কারণ হতে পারে। পালং শাক ফাইবার সমৃদ্ধ হওয়ার কারণে যারা
সহজে হজম করতে পারে না বা পেট সংক্রান্ত সমস্যা থাকে তাদের ক্ষেত্রে পেটেরর
সমস্যা যেতে পারে বা কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা বাড়াতে পারে। তাই এটি খাওয়ার আগে
সঠিক নিয়ম গুলো জেনে নেবেন।
আরো পড়ুন ঃ গর্ভাবস্থায় খালি পেটে থাকলে কি হয়
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ঃ পালং শাকের মধ্যে প্রচুর ভিটামিন কে
রয়েছে। যার ফলে রক্তের জমাট বাঁধা বা ক্লোটিং প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।
যারা রক্ত পাতলা করার ওষুধ (যেমন, Warfarin বা Coumadin) গ্রহণ করছেন, তাদের
জন্য পালং শাকের অতিরিক্ত ভোগ করা উপকারী নয়, কারণ এটি ওষুধের কার্যকারিতা
কমিয়ে দিতে পারে। সেই সাথে ডায়াবেটিক সমস্যাও বৃদ্ধি করতে পারে।
আয়রন শষণের সমস্যা ঃ পালংশাকে ফাইটো এসিড বা
অক্সালেটের পরিমাণ রয়েছে যা আয়রন শাসনের ক্ষমতা কে কমিয়ে যেতে
পারে। যদি পালং শাক অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া হয় তবে এটি শাক থেকে আয়রন
শাসন কমিয়ে দিতে পারে যা রক্তস্বল্পতা বা অ্যানিমিয়ার মত সমস্যা দেখা
দিতে পারে।
মাথাব্যথা বা শারীরিক অস্বস্তি ঃযেহেতু পালং শাকে ভিটামিন কে,
ম্যাগনেসিয়াম এবং পটাশিয়ামের মতো পুষ্টিকর উপাদান রয়েছে যা অতিরিক্ত
খেলে আমাদের দেহের মাথাব্যথা এবং শারীরিক অস্বস্তির মতো সমস্যা দেখা দিতে
পারে। শুধু তাই নয় বরং অতিরিক্ত পালং শাক খাওয়ার ফলে হজমের সমস্যাও দেখা
দিতে পারে।
গর্ভাবস্থায় সর্তকতা ঃ গর্ভবতী মায়েদের জন্য পালং শাকের
অতিরিক্ত ব্যবহার থেকে একটু বিরত থাকা উচিত, কারণ এতে প্রচুর পরিমানে
ভিটামিন কে এবং আয়রনের মতো উপাদান রয়েছে যা কিছু ক্ষেত্রে অতিরিক্ত খেলে
গর্ভধারণের সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে বা গর্ভকালীন রক্তপাতের সমস্যা বাড়িয়ে
দিতে পারে। তবে এটি ব্যক্তিগত অবস্থার উপর নির্ভরশীল। সুতরাং গর্ভাবস্থায়
খাবারের বিষয়ে ডাক্তারি পরামর্শ নেয়া উত্তম।
এলার্জির প্রতিক্রিয়া ঃ যদিও এটি বিরল তবে কিছু লোক পালং
শাক খাওয়ার ফলে এলার্জির প্রভাবে পড়তে পারেন। যার ফলে ত্বকের সমস্যা এবং
শ্বাসকষ্টের মত সমস্যা দেখা দিতেও পারে।
পালং শাক খাওয়ার নিয়ম
পালং শাক খাওয়ার জন্য কিছু সাধারণ নিয়ম নীতি এবং পরামর্শ রয়েছে যা আমাদের
শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারিতা নিশ্চিত করতে সহায়তা করে থাকে। পালং শাক
পুষ্টিকর হলেও এর যথাযথ ব্যবহার আপনাকে আপনার স্বাস্থ্য কে আরো ভালো রাখতে
পারে। এখন আমরা কিছু পালং শাক খাওয়ার নিয়ম ও পরামর্শ দেখব।
- প্রথমে সতেজ পাতাগুলো বেছে নিতে হবে। কেননা সতেজ পাতা হলে তার পুষ্টিগুণ বেশি থাকে। সেজন্য আমাদের দেখতে হবে যে কোন পাতা যেন নষ্ট বা পচে না যদি, যদি পচে যায় বা নষ্ট হয়ে যায় তাহলে তা বর্জন করতে হবে।
- পালং শাক খাওয়ার আগে বা রান্না করার আগে ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে যাতে মাটি বা অন্যান্য দূষিত পদার্থ শাকের পাতার সাথে লেগে না থাকে। আপনি যদি একটু ভিনেগার অথবা লেবুর রস দিয়ে ধুয়ে নিতে পারেন তাহলে অত্যন্ত ভালো হয়।
-
পালং শাক কাঁচা না খেয়ে রান্না করে খাওয়া ভালো। কেননা পালংশাকে
অক্সালেটের পরিমাণ অনেক বেশি থাকে যা আমাদের ক্ষতি করতে পারে। কিন্তু
আমরা যদি রান্না করে খায় তাহলে সেই অক্সালেটের পরিমাণ কমে যায়। তবে
কাঁচা পালং শাকের জুস খাওয়া যেতে পারে।
-
পালং শাক অতিরিক্ত পরিমাণে না খাওয়াই উত্তম। অতিরিক্ত পরিমাণে পালং শাক
খেলে হজমের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে তাছাড়াও কিডনির সমস্যা দেখাইতে
পারে। ভালো হয় আপনি যদি এক থেকে দুই কাপ পালং শাক খেতে পারেন।
- পালং শাক সেদ্ধ বা তেলে ভেজে খাওয়া অত্যন্ত উপকারী। তাতে করে পালং শাকে থাকা ভিটামিন কে এবং এ সহজে শরীর শোষিত হয়। তবে অতিরিক্ত তেলে ভেজে খাওয়া ঠিক নয় অল্প তেলে ভেজে খাওয়া উপকারী।
পালং শাক অত্যন্ত সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর একটি শাক। এটি পুষ্টিকর হলেও এর কিছু
অপকারিতাও দেখা যেতে পারে এর ব্যবহারের নিয়মের ফলে। সঠিক নিয়মে পালং শাক
খেলে শরীরের জন্য উপকারী হতে পারে। তবে যদি কোন শারীরিক সমস্যা থাকে যেমন
কিডনিতে পাথর বা ডায়াবেটিস তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে খাওয়াই উত্তম।
পালং শাকে কোন ভিটামিন থাকে
পালং শাক একটি অত্যন্ত সুস্বাদু এবং উপকারী একটি শাক। কেননা এই শাকে অনেক
বেশি ভিটামিন এবং খনিজের ভালো উৎস রয়েছে। পালং শাক এমন একটি শাক যেখানে
সকল ধরনের ভিটামিন পাওয়া যায়। তাহলে আসুন এখন আমরা জানি পালং শাকের মধ্যে কি
কি ভিটামিন রয়েছে।
প্রতি ১০০ গ্রামে যত পরিমান ভিটামিন থাকে তা একটি ছকের মাধ্যমে দেখানো হল,
ভিটামিন | প্রতি ১০০ গ্রামে |
---|---|
ভিটামিন এ | ৪৬৯মাইক্রো গ্রাম |
ভিটামিন বি২ | ০.২৪ মিলিগ্রাম |
ভিটামিন বি৬ | ০.২৭ মিলিগ্রাম |
ভিটামিন সি | ২৮.১ মিলিগ্রাম |
ভিটামিন কে | ৪৫৫.৫ মিলিগ্রাম |
এছাড়াও পালং শাকে অনেক ধরনের মিনারেল রয়েছে যেমন আয়রন ম্যাগ্নেসিয়াম
ক্যালসিয়াম এবং পটাশিয়াম জাতীয় পুষ্টিকর উপাদান। তবে পালং শাক রান্না করার
সময় কিন্তু ভিটামিন সি এর মাত্রা কমে যায়। কারণ ভিটামিন সি আগুনের তাপ সহ্য
করতে পারে না। তবে অন্যান্য পুষ্টিকর উপাদান পুরোপুরি বহাল থাকে।
পালং শাকে কোন এসিড থাকে
পালংশাকে বেশ কিছু এসিড লক্ষ্য করা যায়। এগুলো শরীরের বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয়
কার্যক্রমে ভূমিকা রাখে আবার এমন কিছু এসিড রয়েছে যা আমাদের দেহের ক্ষতি করে
থাকে। বিশেষ করে আমাদের দেহে কিডনির পাথর এবং হজমের সমস্যা ও সৃষ্টি করতে পারে এই
এসিড গুলো। তাহলে এখন জানুন আসলে ওই অ্যাসেট গুলো কি কি।
- অক্সালিক এসিড
- ফলিক অ্যাসিড
- ফিনোলিক এসিড
- সাইট্রিক এসিড
অক্সালিক অ্যাসিড ঃ পালং শাকের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং
প্রধান এসিড হলো অক্সালিক এসিড। এটা একটি প্রাকৃতিক এসিড যা পালং শাকের তিক্ত
স্বাদের জন্য দায়ী। অক্সালিক এসিড ক্যালসিয়াম এবং অন্যান্য খুনিদের সঙ্গে
মিলিত হয়ে অক্সালেট তৈরি করে যা কিছু মানুষের জন্য কিডনির পাথর বা মুত্রনালী
সমস্যার কারণ হতে পারে।
ফলিক এসিডঃ ফলিক এসিড মূলত এক ধরনের ভিটামিন বি৯। পালংশাকে ফলিক
এসিড অথবা বি৯ এর পরিমাণ অত্যন্ত বেশি। এই এসিড কোষের বৃদ্ধি, স্নায়ুতন্ত্রের
সুস্থতা এবং গর্ভবতী নারীর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং উপকারী।
তাছাড়াও এটি আমাদের শরীরের সেল ডিভিশন এবং ডিএনএ সংশ্লেষণ করতে
সহায়তা করে থাকে।
ফিনোলিক এসিড ঃ পালং শাকে এক জাতীয় এসিড থাকে যার নাম
ফিনোলিক এসিড যা অত্যন্ত শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসাবে কাজ করে। এটি
শরীরের কোষগুলিকে মুক্ত রেডিক্যাল এর ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করতে সহায়তা
করে।
সাইট্রিক এসিড ঃ পালংশাকে কিছু পরিমাণ সাইট্রিক এসিডের
পরিমাণও দেখা যায়। পালং শাকে থাকা এই সাইট্রিক এসিড আমাদের খাদ্য হজমে
ভূমিকা রাখে এবং শরীরের বিপাকীয় প্রক্রিয়ায় সাহায্য করে।
আমাদের শেষ কথা : গর্ভাবস্থায় পালং শাক খাওয়ার উপকারিতা
সম্মানিত পাঠকগণ আমরা আমাদের এই পোস্টে আলোচনা করেছি যে গর্ভাবস্থায়
পালং শাক খাওয়ার উপকারিতা এবং পালং শাকের জুসের উপকারিতা সম্পর্কে। পালং শাক
অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি খাবার যা আমাদের জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি খাবার। আমরা যে
শুধু এখানে গর্ভাবস্থায় পালং শাক খাওয়া উপকারিতা এই পোস্টে আলোচনা করেছি তা
কিন্তু নয় এখানে আমরা আলোচনা করেছি পালং শাক খাওয়ার উপকারিতা এবং অপকারিতা
সম্পর্কেও।
আসলেই পালং শাক অত্যন্ত উপকারী এবং পুষ্টিগুণ সম্পন্ন একটি খাবার। তবে পালং শাক
খাওয়ারও কিন্তু নিয়ম রয়েছে। আপনি যদি সেই নিয়ম মেনে না খান তাহলে আপনার
উপকারের চেয়ে বরং ক্ষতি বেশি হতে পারে। তাই আমাদের এই আর্টিকেলে
দেওয়া তথ্য অনুযায়ী যদি আপনি খেতে পারেন তাহলে আশা করা যায় আপনি অনেক
বেশি উপকৃত হবেন। আর দিনশেষে আপনাদের উপকারিতায় আমাদের প্রধান লক্ষ্য।
ট্রাজেডি আইটি নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url