বৃষ্টির পানির উপকারিতা এবং বৃষ্টির পানি কি খাওয়া যায়
বৃষ্টির পানির উপকারিতা সম্পর্কে আপনি কি জানতে ইচ্ছুক ? যদি ইচ্ছুক হয়ে থাকেন
তাহলে আমাদের এই আর্টিকেল থেকে বৃষ্টির পানির সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেন। কেননা
এই আর্টিকেলে আমরা বৃষ্টির সম্পর্কে আলোচনা করতে চলেছি।
তাছাড়াও আপনি এই আর্টিকেলে আরো জানতে চলেছেন যে বৃষ্টি পানি কি খাওয়া হয় এই
বিষয় সম্পর্কে। বৃষ্টির সময় অথবা বৃষ্টির পানি আমাদের অনেক বেশি পছন্দ হয়ে
থাকে কিন্তু আমরা অনেকেই জানি না বৃষ্টি সম্পর্কে। তাই আমরা এই আর্টিকেলে বৃষ্টির
সম্পর্কে আলোচনা করতে চলেছি।
পোস্ট সূচিপত্র ঃ বৃষ্টির পানির উপকারিতা
বৃষ্টির পানির উপকারিতা
বৃষ্টির পানির উপকারিতা সম্পর্কে জানা আমাদের জন্য অত্যন্ত জরুরী। কেননা আমরা মনে
করে থাকি যে বৃষ্টির পানিতে ভিজলেই অথবা বৃষ্টি পানিতে গোসল করলেই ঠান্ডা লেগে
যাবে এবং সেই ঠাণ্ডা লাগা থেকে জ্বর এবং সর্দি কাশি দেখা দিবে। আসলে এর সত্যতা
কতটুকু আমরা বৃষ্টির পানির সুফল সম্পর্কে না জানলে হয়তো বুঝতে পারবো না। তাই
আসুন এই আর্টিকেলের এই পর্যায়ে জেনে নিন যে বৃষ্টির পানির উপকারিতা কেমন এই
বিষয়ে সম্পর্কে।
- হজম শক্তি বৃদ্ধিতে ঃ বৃষ্টির পানিতে একটি উপকারী উপাদান রয়েছে যেটি হল অ্যালকাইন। যেটি আমাদের মানবদেহের পেটের এসিডিটি দূর করে এবং সেই সাথে আমাদের হজম শক্তি কেউ বৃদ্ধি করে দেয়।
-
ঘামাচি দূর করণে ঃ বৃষ্টির পানির আরেকটি বড় উপকারিতা হলো
ঘামাচি দূর করা। আপনার যদি অতিরিক্ত ঘামাচি হয়ে থাকে তাহলে বৃষ্টিতে ভিজে
দেখুন। দেখবেন আপনার ঘামাচি দূর হতে শুরু করেছে।
-
কানের সমস্যা দূর করুনঃ বৃষ্টির পানির কারণে কানের সমস্যা থেকে
রেহাই পাওয়া যায়। বৃষ্টির পানি আমাদের কানের ব্যথা এবং কানের ইনফেকশন
জনিত সমস্যা থেকে মুক্তি দিয়ে থাকে।
-
ফসলের উপকারিতা ঃ বৃষ্টির পানির একটি অনেক বড় ভূমিকা
রয়েছে আমাদের দেশে কৃষি কাজে। বৃষ্টির পানির কারণে আমাদের দেশের জমিগুলো
উর্বর হয়ে ওঠে। আবার সেই সাথে আমাদের মাঠের ফসল গুলো অনেক বেশি ফলনশীল হয়ে
থাকে।
-
মানসিক শান্তিতে বৃষ্টি ঃ মানসিক শান্তিতে বৃষ্টির
একটু অনেক বড় ভূমিকা রয়েছে। আমাদের দেহে এমন দুটি হরমোন রয়েছে যা
নিঃসরণ হলে আমাদের মানসিক অবসাদ অথবা মানসিক দুশ্চিন্তা দূর হয়ে যায়। যে
দুটি হরমোন নিঃসরণ হয় তা হলো অ্যান্ডরফিন এবং সেরেটোনিন। যা
বৃষ্টির পানিতে ভেজার ফলে নিঃসরণ হয় এবং আমাদের মানসিক অবসাদ দূর হয়।
-
চর্মরোগ দূর করতে ঃ বৃষ্টির পানিতে ভেজার ফলে আমাদের দেহের
চর্মরোগ দূর হয়ে যায়। বৃষ্টিতে ভেজার ফলে আমাদের দেহের খুসখুসি,
চুলকানি এবং ঘামাচি দূর করে থাকে।
- ক্যান্সার দূর করতে ঃ বৃষ্টির পানি ক্যান্সার নিরাময়ে অনেক বেশি ভূমিকা পালন করে থাকে। বৃষ্টির পানিতে থাকা অ্যালকাইন ক্যান্সারে বিরুদ্ধে অনেক বেশি লড়াই করে থাকে।
-
ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে ঃ বৃষ্টির পানি আমাদের ত্বকের
সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে অনেক বেশি কার্যকরী। ভারী বৃষ্টিতে বাষ্পের তৈরি হয়
যে বাষ্প গুলি পরিবেশের রোগ জীবাণুকে ধ্বংস করে দেয় এবং আমাদের ত্বকের
সৌন্দর্যকে বৃদ্ধি করে দেয়।
-
শরীরের বিষাক্ত উপাদান নির্মূলে ঃ বৃষ্টির পানি পান করার
ফলে আমাদের দেহের বিষাক্ত উপাদান বের হয়ে যায়। সেইসাথে আমাদের দেহের রক্তের
পিএইচ এর মান স্বাভাবিকভাবে থাকে।
-
চুলের উপকারিতা ঃ চুলের উপকারিতায় বৃষ্টির পানির জুড়ি
নেই। বৃষ্টির পানিতে অ্যালকাইন থাকার ফলে চুলের ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করে
দেয় এবং চুলের গোড়াকে মজবুত করে। সে সাথে আমাদের মাথার খুশকি ও দূর
করে থাকে বৃষ্টির পানি।
-
কাপড় ধোয়ার জন্য ঃ হয়তো এখন একটু অবাক হচ্ছেন যে কাপড়
ধোয়ার জন্য বৃষ্টি্র পানির উপকারিতা কি। আসলে বৃষ্টির পানিতে কাপড় ধুইলে
কাপড় অনেক ভালোভাবে পরিষ্কার হয়।
-
পাকস্থলী সুস্থ রাখতে ঃ পাকস্থলী সুস্থ রাখতে বৃষ্টির পানি
অনেক বেশি ভূমিকা পালন করে থাকে। প্রতিদিন সকালে বৃষ্টির পানি দুই থেকে তিন
চামচ পান করলে পাকস্থলী সুস্থ থাকে।
বৃষ্টির পানি কি খাওয়া যায়
বৃষ্টির পানি কি খাওয়া যায় এই বিষয় নিয়ে আমাদের মধ্যে অনেক কিছু
দ্বিধাদ্বন্দ্ব রয়েছে। আমাদের মাঝে একটি ভুল ধারণা রয়েছে যেটি হলো বৃষ্টিতে
গোসল করলেই বা বৃষ্টির পানি খেলে ঠান্ডা লাগা থেকে শুরু করে জ্বর সর্দি কাশি
দেখা দিতে পারে। হ্যাঁ এটা হতে পারে কিন্তু সব সময় হবে যে তার কোন প্রমাণ
ণেই। আমি অনেক সময় ভাবি যে একটু বৃষ্টি পানি খেয়ে দেখি আবার অনেক সময়
মনে হয় যদি বৃষ্টি পানি খেলে অসুখ-বিসুখে ধরে। তাই আজকে আমরা এই বিষয় নিয়ে
পরিষ্কার করব যে বৃষ্টির পানি কি খাওয়া যায়।
সোজাসুজি বলতে গেলে বৃষ্টির পানি শুধু যে খাওয়াই যায় সেটি নয় বরং বৃষ্টি
পানি খাওয়াতে আমাদের অনেক উপকারিতা পাওয়া যায়। প্রাচীন আয়ুর্বেদ শাস্ত্র
থেকে জানা যায় যে বৃষ্টির পানি খাওয়া একজন মানুষের জন্য নিরাপদ। তবে পানি
খাওয়ার আগে পানির সংরক্ষণ অত্যন্ত জরুরী। কমপক্ষে এক ঘন্টা বৃষ্টি হওয়ার পর
আপনি পানির সংরক্ষণ করতে পারেন। তবে ভালো হয় যে পানি রাখার পাত্রে যদি কাঁসা
পাত্র বা পিতলের পাত্র হয়।
আরো পড়ুন ঃ বর্ষা ঋতুর বৈশিষ্ট্য
বৃষ্টির পানি প্রতিদিন দুই থেকে তিন চামচ খাওয়ার ফলে আমাদের পাকস্থলীর জীবাণু
দূর হয়ে যায় এবং পাকস্থলী থাকে সুস্থ। শুধু তাই নয় বৃষ্টির পানি খাওয়ার ফলে
আমাদের পেটের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর হয়ে যায়। আবার এই পানি খাওয়ার ফলে
আমাদের হজম শক্তিও বৃদ্ধি পায়। আরো অসংখ্য উপকারিতা রয়েছে যা আমরা উপরে
সম্পূর্ণভাবে আলোচনা করতে সক্ষম হয়েছি। আমরা আশা করছি যে আপনারা পানি খাওয়ার
দ্বিধা দ্বন্দ্ব থেকে মুক্ত হতে পেরেছেন।
বৃষ্টির পানির pH কত
বৃষ্টির পানির PH কত জানার আগে আমাদের এটা জানতে হবে যে PH আসলে কি ?
PH হলো একটি দ্রবণ কতটুকু ক্ষারীয় এবং কতটুকু অম্লীয় বা এসিডিও তা
জানার পরিমাপ স্কেল। সাধারণত PH কেলের ০ থেকে ৬ পর্যন্ত অম্লীয়। আর ৮
থেকে ১৪ পর্যন্ত ক্ষারীয় এবং মাঝখানের ৭ হচ্ছে নিরপেক্ষ। এখন মূল প্রশ্নে
আসা যাক। মূল প্রশ্নটি হল বৃষ্টির পানির PH এর মান কত ? আসলে বৃষ্টির
পানির PH এর মান হল ৫.৬। যা হলো এক ধরনের ক্ষারীয়।
বৃষ্টির পানিতে কোন এসিড থাকে
বৃষ্টির পানি সম্পর্কে তো আমরা এতক্ষণ অনেক কিছু জানলাম। যেমন বৃষ্টির
পানির ভাল দিক এবং এর pH এর মান সম্পর্কেও। তাহলে আসুন এখন আমরা জানি যে
বৃষ্টির পানিতে কি কি এসিড থাকে। এটি জানাও আমাদের জন্য অত্যন্ত
জরুরী। বৃষ্টির পানিতে যেসব এসিড থাকে সেগুলো টেবিল আকারে দেওয়া হল।
নাম | প্রতিকি চিহ্ন |
---|---|
কার্বনিক এসিড | H₂CO₃ |
সালফিউরিক এসিড | H₂SO₄ |
নাইট্রিক এসিড | HNO₃ |
এসিটিক এসিড | CH₃COOH |
ফরমিক এসিড | HCOOH |
বৃষ্টির পানিতে কোন ভিটামিন থাকে
আমাদের লোক সমাজে একটি প্রশ্ন ঘোরাঘুরি করে সেটি হল বৃষ্টির পানিতে কোন ভিটামিন
থাকে সেই বিষয় নিয়ে। আমরা এই আর্টিকেলের মাধ্যমে পরিষ্কারভাবে জানাতে চাই যে
বৃষ্টির পানিতে কোন এসিড থাকে কিনা। আসলে বৃষ্টির পানিতে বাষ্প তৈরি হয় যে
বাষ্প আমাদের জন্য অনেক বেশি উপকারী। কারণ সেই বাসবো আমাদের চারপাশের
ব্যাকটেরিয়া এবং জীবাণুগুলোকে ধ্বংস করতে সাহায্য করে থাকে।
বৃষ্টি আমাদের জন্য অনেক বেশি উপকারিতা বয়ে আনে। শুধু যে মানব জীবনে উপকারিতা
বয়ে আনে তা কিন্তু নয় বরং পশু পাখির জন্য বৃষ্টি অনেক উপকারী। এখন মূল প্রশ্ন
হলো বৃষ্টির পানিতে কোন ভিটামিন থাকে আসলে বৃষ্টির পানিতে তেমন কোন ভিটামিন
থাকে না। এখানে জলীয় উপাদান থাকে। তবে বৃষ্টি হওয়ার পরে মাটিতে পতিত হওয়ার
পর ভিটামিন বি এবং ভিটামিন বি প্লাস উৎপন্ন করে যা মাটি এবং আমাদের জন্য উভয়ই
উপকারী।
বৃষ্টির পানিতে কি কি উপাদান থাকে
পানিতে কি কি উপাদান থাকে আপনি কি জানেন? যদি জেনে না থাকেন তাহলে নিচের
দেওয়ার টেবিল থেকে জেনে নিন যে পানিতে কি কি উপাদান থাকে।
নাম | উপাদান |
---|---|
পানি | প্রধান উপাদান যা H₂O আকারে থাকে |
অবশিষ্ট গ্যাস | যেমন অক্সিজেন, নাইট্রোজেন এবং কার্বন ডাইঅক্সাইড |
খনিজ লবণ | সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং ক্যালসিয়াম |
এসিড | কার্বনিক, নাইট্রিক, ফরমিক এবং সালফিউরিক এসিড |
জৈব পদার্থ | গাছপালা থেকে আসা ব্যাকটেরিয়া, পুষ্টি উপাদান এবং ছত্রাক |
দূষণকারী পদার্থ | হুরে এলাকা থেকে উদ্ভূত ধুলো, ধোঁয়া, এবং রাসায়নিক পদার্থ |
আমাদের শেষ কথা ঃ বৃষ্টির পানির উপকারিতা
সম্মানিত পাঠকগণ আমরা এই পোস্টে আমরা আলোচনা করেছি যে বৃষ্টির পানির
উপকারিতা আরো অন্যান্য সকল বিষয় নিয়ে। বৃষ্টি সম্পর্কে বলতে বলা যায় যে বৃষ্টি
আমাদের জন্য আশীর্বাদ স্বরুপ। তবে অনেক সময় অতি বৃষ্টি আমাদের জন্য ক্ষতি
বয়ে আনে। বৃষ্টির পানি আমাদের জন্য অত্যন্ত উপকারী এবং প্রয়োজনের একটি
জিনিস। বৃষ্টি পানি আমাদের মানব জীবনের বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হয়ে থাকে
যেমন স্বাস্থ্যের জন্য বা কৃষি কাজের জন্য।
আরও বিভিন্ন কাজ রয়েছে যেগুলোতে বৃষ্টির পানি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি
ভূমিকা পালন করে থাকে। সম্মানিত পাঠকগণ আমরা এই পোস্টে যা যা আলোচনা করেছি
সম্পূর্ণ আমাদের গবেষণা এবং পড়াশোনার ফলস্বরূপ লেখা হয়েছে। আপনারা যদি এই
আর্টিকেল থেকে তথ্য নিয়ে প্রাথমিক জীবনে ব্যবহার করতে পারেন তাহলে আশা করা
যায় আপনারা উপকৃত হবেন। দিনশেষে আপনাদের উপকৃত হওয়াটাই আমাদের জন্য
প্রাপ্তির বিষয়।
ট্রাজেডি আইটি নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url