ওযুর ফরজ কয়টি এবং ওযু করার নিয়ম
ওযুর ফরজ কয়টি আপনি কি জানতে চাচ্ছেন। তাহলে আমাদের এই আর্টিকেল থেকে জেনে নিন।
কেননা আমরা মুসলিম আমাদের প্রধান ইবাদত হলো সালাত বা নামাজ যার জন্য ওযু করা
আমাদের জন্য ফরজ।
ওযু আমাদের জন্য বিশেষ কিছু ইবাদতের জন্য আল্লাহ তায়ালা ফরজ করে দিয়েছেন। আপনি
যদি ওযুর সকল ফরজ সম্পর্কে না জানেন তাহলে আমাদের এই আর্টিকেল থেকে জানুন। যাতে
আপনিও সঠিক ভাবে ওযু করতে পারেন। তাছাড়াও আপনি জানবেন ওযুর আগে ও পরের দোয়া
সম্পর্কে।
পোস্ট সূচিপত্র ঃ ওযুর ফরজ কয়টি
ওযুর ফরজ কয়টি
ওযুর ফরজ কয়টি জানা আপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যদি আপনি একজন মুসলিম
পরিবারের বা মুসলিম হয়ে থাকেন। ওযু হলো পবিত্রতার জন্য আমাদের শরীরের বিভিন্ন
অঙ্গ ধৌত করা। আমাদের ইসলাম ধর্মে বেশ কিছু ইবাদত রয়েছে যা পালন করতে গেলে
ওযু করা আবশ্যক বা যাকে বলা হয় ফরজ। আমরা তো ওযু করতে কম বেশি সকলেই করতে
জানি কিন্তু আমরা অনেকেই জানি না যে ওযুর ফরজ কয়টি।
মূল আমাদের হাদিস থেকে জানা যায় বা বিভিন্ন ইসলামিক বই থেকে জানা যায় যে ওযুর
ফরজ প্রধানত ৪ টি। সেই গুলো হলো,
- সমস্ত মুখমন্ডল সুন্দরভাবে ধৌত করা
- দুই হাতের কনুই পর্যন্ত ভালো ভাবে ধৌত করা
- মাথার চার ভাগের এক ভাগ ভালোভাবে মাসেহ করা।
- দুই পায়ের টাকনুসহ ভালোভাবে ধৌত করা
এই সকল হলো ওযুর ফরজ। ওযু হলো আমাদের জন্য ফরজ। ওযু ছাড়া যদি আমরা কোন
ইবাদত করি তাহলে সেটি সওয়াবের পরিবর্তে গুনাহে পরিনত হবে। হ্যাঁ আমাদের
ইসলাম ধর্মে এতটাই গুরুত্বপূর্ণ হলো এই ওযু।
ওযুর আগে ও পরের দোয়া
ওযুর আগে ও পরের দোয়া সম্পর্কে আপনি কি জানেন না। আপনি যদি এখন পর্যন্ত
না জানেন যে ওযুর আগে ও পরের দোয়া সম্পর্কে তাহলে আসুন জানুন আমাদের এই
আর্টিকেল থেকে। মহান রব্বুল আলামিন আমাদের প্রত্যেক কাজের আগে এবং পরে
কিছু বরকত হিসেবে দোয়া দিয়েছেন। যার মাধ্যমে আমরা আল্লাহর কাছে আমাদের
প্রয়োজনীয় চাহিদা প্রকাশ করে থাকি। মহান আল্লাহ তায়ালা ওযুর আগে এবং পরে
এরকম দোয়া দিয়েছেন তা হল।
বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিখিয়েছেন যে আমরা
যখন ওযু শুরু করব তার আগে যেন আমরা " বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম "
বলি। তাই আমাদের ওযুর আগে বলতে হয় " বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম "।
যার অর্থ হল পরম করুণাময় ও দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি। ওযুর আগে এই দোয়া
এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে একটি হাদিসে বলা হয়েছে।
বিশ্বনবী ( স. ) বলেন যে " যে ব্যাক্তি ওযুর প্রথমে বা শুরুতে "
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম " বলবে না তার ওযু
সম্পূর্ণ হবে না। ( তিরমীজি হাদিস নাম্বার ২৫ )
তাছাড়াও আরো পড়তে হয় ওযুর মাঝখানে যেই দোয়া সেটি হলো,
" আল্লাহুম্মাগফিরলি জাম্বি ওয়া ওয়াসসি’লি ফি দারি, ওয়া বারিকলি ফি
রিজকি "
অর্থ ঃ হে আল্লাহ, আমার পাপ মাফ করুন, আমার আবাসস্থল কে
পরিসর করে দিন এবং আমার রিজিকের বরকত বাড়িয়ে দিন।
এরপর ওযুর পর পঠিতব্য দোয়াটি হলো একটি কালিমা যা হলো,
"আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকালাহু, ওয়া আশহাদু
আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহু"
অর্থ ঃ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই,
তিনি একক, তাঁর কোনো অংশীদার নেই এবং হযরত মুহাম্মদ (স.) তাঁর প্রেরিত
রাসূল।
হযরত ওমর ফারুক (রা.) বর্ণণা করেন যে বিশ্বনবী
মুহাম্মদ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে যে ব্যাক্তি ওযুর
শেষে কালিমায়ে শাহাদাত পাঠ করে তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজায় খুলে দেওয়া
হবে, সেই ব্যাক্তি যে দরজা দিয়ে ঢুকার ইচ্ছা হবে সেই দরজা দিয়ে ঢুকবে। (
মুসলিম মিশকাত )
ওযু করার নিয়ম
ওযু করার নিয়ম সম্পর্কে আপনি কি জানেন না। তাহলে তো আপনি নামাজ পড়তে
পারবেন না তাছাড়াও আরো অনেক ইবাদত রয়েছে সেগুলো আপনি করতে পারবেন না।
এখন আপনার করনীয় অতি তাড়াতাড়ি ওযু শিখে নেওয়া। এখন আপনি শিখবেন কিভাবেন
তাহলে শিখুন আমাদের এই আর্টিকেল থেকে।
- প্রথমে আপনি " বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম " বলে শুরু করুন।
- এরপর আপনি আপনার দুই হাত কব্জি পর্যন্ত ভালোভাবে ধুয়ে নিন। প্রথমে ডান হাত এবং পরে বাম হাত ধুবেন।
- তারপর আপনি ৩ বার কুলি করুন ভালোভাবে গড়গড়া সহ।
- সমস্ত মুখ ভালোভাবে ধুয়ে নিন এবং সেই সাথে ভালোভাবে নাক পরিষ্কার করে নেন।
- এখন আপনি আপনার দুই হাত কুনুই পর্যন্ত ভালভাবে ধুয়ে নেন। তবে প্রথমে ডান হাতে।
- এরপর মাথার চার ভাগের এক ভাগ ভালোভাবে মাসেহ করুন সেই সাথে কান থেকে ঘাড় পর্যন্ত।
- সর্বশেষে পায়ের টাকনু পর্যন্ত সুন্দর করে ধুয়ে নেন তবে প্রথমে ডান পা ধুতে হবে।
কি কি কাজে ওযু লাগে
কি কি কাজে ওযু লাগে আপনি কি জানেন। আপনি যদি না জানেন তাহলে তো এই
আর্টিকেল আছেই। এই আর্টিকেল থেকে জানুন। আমরা এখানে জানাতে চলেছি ফরজ,
ওয়াজিব এবং মুস্তাহাব হিসেবে।
ওযু করা ফরজ
- আপনি যদি নামাজ পড়তে চান সেক্ষেত্রে ওযু করতে হবে। আপনি যদি নফল নামাজও পড়তে চান তবুও আপনাকে ওযু করতে হবে।
-
আপনি যদি কোন জানাজায় শরিক হতে চান তাহলে আপনাকে অবশ্যই ওযু করতে
হবে।
-
আপনি যদি পবিত্র কোরআন শরীফ পড়তে চান বা কোরআন শরীফের কোন আয়াত লিখতে
চান তাহলে আপনাকে অবশ্যই ওযু করতে হবে।
ওযু করা ওয়াজিব
- ওযু করা ওয়াজিব তখন যখন আপনি পবিত্র কাবা শরীফ তাওয়াফ করবেন।
ওযু করা মুস্তাহাব
- পবিত্রতার সাথে ঘুমানোর জন্য ওযু করা মুস্তাহাব
- ঘুম থেকে ওঠার পর ওযু করা সুন্নত
- সবসময় ওযু থাকা বিশ্বনবীর সুন্নত
-
আপনি যদি কারো বিপক্ষে গীবত বা নিন্দা করে থাকে তখন ওযু করা
মুস্তাহাব
- খারাপ কোন ভিডিও বা কবিতা দেখে ওযু করা মুস্তাহাব
- মৃতকে গোসল দেওয়ার জন্য ওযু করা
- অট্টহাসি দেওয়ার পর ওযু করা
- লাশকে কবরস্থানে নামানোর জন্য ওযু করা
- ফরজ গোসলের আগে ওযু করা
- বিশ্বনবী সঃ এর কবর জিয়ারতের সময়
- হাদীস গ্রন্থ পড়ার সময়
- কোরআন শরীফ সবার সময় ওযু করা
- খুতবা দেওয়ার সময় ওযু করা
- ইসলামিক জ্ঞান অর্জন করার সময় ওযু করা
- আযান দেওয়ার আগে ওযু করা
- অতিরিক্ত রেগে গেলে ওযু করা মুস্তাহাব
ওযু ভাঙ্গার কারণ
ওযু ভাঙ্গার কারণ রয়েছে বেশ কয়েকটি তার মধ্যে হলো,
- পেশাব বা পায়খানার রাস্তায় কোন কিছু বের হয়ে গেলে
- গোসল ফরজ হয়ে গেলে
- নামাজের মধ্যে অট্ট হাসি দিলে
- ঘুমিয়ে গেলে
- অশ্লীল কোন কিছু দেখলে
- বেহুঁশ হয়ে গেলে
- শরীরের কোন নাপাক হয়ে গেলে
- উটের মাংস খেলে
- লজ্জাস্থান স্পর্শ করলে
- রক্ত পুঁজ বা পানি বের হলে
- থুথুর সাথে রক্ত গেলে
- মুখ ভরে বমি করলে
আমাদের শেষ কথা ঃ ওযুর ফরজ কয়টি
সম্মানিত পাঠকগণ আমরা এই আর্টিকেল আলোচনা করেছি ওযুর ফরজ কয়টি
সম্পর্কে এবং আর অন্যান্য সকল বিষয় নিয়ে। ওযু একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়
আমাদের জন্য। আমাদের বড় বড় ইবাদতের ক্ষেত্রে ওযু করা আবশ্যক। এছাড়াও
হুজুর রয়েছে অনেক ফজিলত এবং উপকারিতা। আধুনিক বিজ্ঞানীরা বলেন যে অজু
করার ফলে চেহারার উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি হয়। সম্মানিত পাঠকগণ আমরা এই আর্টিকেল
যেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি সেসব বিষয়ে অত্যন্ত পড়াশোনা এবং গবেষণার
মাধ্যমে লেখা হয়েছে। আমরা আশা করছি যে এই আর্টিকেল থেকে আপনারা উপকৃত
হবেন।
ট্রাজেডি আইটি নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url